ফেক্সো ট্যাবলেট এর কাজ কি - ফেক্সো ১২০ ট্যাবলেট এর ব্যবহার

ফেক্সো ১২০ এর কাজ, ফেক্সো ১২০ খাওয়ার নিয়ম, ফেক্সো ১২০ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ফেক্সো ট্যাবলেট এর দাম ও কাজ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের নিবন্ধন।
ফেক্সো ট্যাবলেট এর কাজ কি
যেহেতু প্রত্যেকটি ওষুধের কিছু না কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে থাকে পাশাপাশি সেবনের বিধি নিষেধ মেনে চলার প্রয়োজন পড়ে, তাই পূর্বেই জানু়ন– ফেক্সো ১২০ ট্যাবলেট ওষুধের কাজ, ফেক্সো ১২০ মি: গ্রা: ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সহ আনুষঙ্গিক বিষয়বস্তু সম্পর্কে খুঁটিনাটি।

ফেক্সো ট্যাবলেট এর কাজ কি

ফেক্সো ১২০ ঔষধটি পেরিফেরাল এইচ ওয়ান রিসেপ্টর এর কার্যকারিতা বিরোধী অ্যান্টিহিস্টামাইন। এটি মূলত শরীরের এলার্জি সংক্রান্ত লক্ষণ গুলোর জন্য দায়ী হিস্টামাইন নামক রাসায়নিক পদার্থকে ব্লক করে। যাদের শরীরে চুলকানি জনিত সমস্যা, হাঁচি-কাশি, গলা ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়াসহ এলার্জিক রাইনাইটিস এর লক্ষণ দেখা দেয় তাদের জন্য কার্যকরী ঔষধ ফেক্সো। কেননা ফেক্সো ১২০ প্রাপ্তবয়স্ক ও বাচ্চাদের সৃজনাল এলার্জিক রাইনাইটিস + ইডিওপ্যাথিক ইউর্টিকিয়ার নিরাময়ের কাজ করে।

ফেক্সো ১২০ ট্যাবলেট এর ব্যবহার

ফেক্সোফেনাডিন হাইড্রোক্লোরাইড জেনেরিক এর একটি ট্যাবলেট ওষুধ ফেক্সো। যে ওষুধটি স্কোয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড তৈরি করেছে। মূলত ফেক্সো ঔষধটি ১২০ মি: গ্রা: আকারে পাওয়ার পাশাপাশি ৬০ ও ১৮০ মি: গ্রা: ট্যাবলেট আকারেও সংগ্রহ করা যায়। সেই সাথে ফেক্সো ৩০ মিঃ গ্রাঃ/৫ মিঃ লিঃ সাসপেনশন আকারেও সংগ্রহ করা যায়। মূলত একজন রোগীর সমস্যার উপর নির্ভর করে, বয়সের উপর ডিপেন্ড করে চিকিৎসকরা ফেক্সো ৬০ মি:গ্রা:, ফেক্সো ১২০ মি: গ্রা: , ফেক্সো ১৮০ মি:গ্রা: ট্যাবলেট অথবা ফেক্সো ৩০ মিঃ গ্রাঃ/৫ মিঃ লিঃ সাসপেনশন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

তবে ফেক্স ১২০ ট্যাবলেটটি ঋতু অনুযায়ী এলার্জিক রাইনাইটিস এবং দীর্ঘস্থায়ী ছুঁলির (Chronic Utricaria) সমস্যার সমাধানে সেবনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। জানা যায়, ফেক্সো ১২০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট ওষুধটি মুখেসেবনযোগ্য এবং এটি মুখে সেবনের দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে সর্বোচ্চ প্লাজমা ঘনত্বে পৌঁছায়।

আর এই নিয়ে একটি রিপোর্ট থেকে এটা জানা গিয়েছে যে– এই ঔষধ ব্লাড ব্রেইন ব্যারিয়ার অতিক্রম করে না। যার ফলে ফেক্সোফেনাডাইন হাইড্রোক্লোরাইড এর মোট ডোজের ৫% মেটবোলাইসড হয়, যার বেশির ভাগই সম্পন্ন হয় অন্ত্রের শ্লেষ্মা দ্বারা। আর মাত্র ০.৫ থেকে ১.৫% ডোজ সাইটোক্রোম পি–৪৫০ সিস্টেম দ্বারা হেপাটিক বায়োট্রান্সফরমেশনের মধ্য দিয়ে যায়, ফলে এর রেচন সাধারণত মলের মাধ্যমে হয়, যার মাত্রা প্রস্রাবে উপস্থিত থাকে মাত্র ১০%. এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক, ফেক্সো ট্যাবলেট ঔষধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম।

ফেক্সো ১২০ খাওয়ার নিয়ম | Fexo 120mg | মাত্রা ও সেবনবিধি

যাদের বয়স ১২ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি, ঐ সকল রোগীদের ফেক্স ১২০ মি: গ্রা: ট্যাবলেট ওষুধটি প্রতিদিন একবার খেতে হবে। আর এমনটাই লেখা থাকে ঔষধের গায়ে উল্লেখিত সেবন বিধিতে। কেননা উক্ত সমস্যা গুলোর জন্য ১২ বছর বা তার চেয়ে অধিক বয়সী মানুষের Fexo ১২০ ঔষধটি দিনে একবার সেবন করলেই যথেষ্ট।

তবে মাত্রা ও সেবন বিধি হিসেবে আমরা ফিক্সো ট্যাবলেট ওষুধের বাকি ডোজ গুলো সেবনের নিয়ম সংযুক্ত করব আলোচনার এ পর্যায়ে।

এলার্জিক রাইনাইটিস এর সমস্যার ক্ষেত্রে ফেক্সো ওষুধের মাত্রা ও সেবন বিধি:
✓ ২ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ফেক্সো ৩০ মিঃ গ্রাঃ/৫ মিঃ লিঃ সাসপেনশন অর্থাৎ সিরাপ ঔষধটি খাওয়াতে হবে দৈনিক দিনে দুইবার। ঔষধের পরিমাণ— ৩০ মি:গ্রা: অথবা ৫ মি:লি: অর্থাৎ এক চা চামচ। অন্যদিকে বৃক্কিয় কার্যকারিতা যদি কমে যায়, সেক্ষেত্রে ৩০ মিলিগ্রাম অথবা পাঁচ মিলি লিটার পরিমাণ ঔষধ দৈনিক একবার খাওয়াতে হবে।

✓ ৬ থেকে ১১ বছর বয়সি শিশুদের জন্য ফেক্সো ট্যাবলেট ওষুধটি ৩০ মিলিগ্রাম দৈনিক দুইবার অথবা ৬০ মিলিগ্রাম দৈনিক একবার করে খাওয়াতে হবে। আর যদি বিক্কিয় কার্যকারিতা কমে যায় সে ক্ষেত্রে ৩০ মিলিগ্রাম অথবা পাঁচ মিলিলিটার অর্থাৎ সিরাপ ঔষধটি দৈনিক একবার এক চামচ খাওয়াতে হবে।

✓ অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্ক থেকে শুরু করে ১২ বছর এর বেশি বয়সী শিশুদের ৬০ মি:গ্রা: ট্যাবলেট দৈনিক দুইবার অথবা ১২০ / ১৮০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট দৈনিক একবার খাওয়াতে হবে।

অন্যদিকে– ক্রনিক ইডিওপ্যাথিক আর্টিক্যারিয়া এর ক্ষেত্রে,
✓ ৬ মাস থেকে শুরু করে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের সিরাপ খেতে হবে ২.৫ মিলিগ্রাম অর্থাৎ ১/২ চা চামচ দৈনিক দুইবার।
✓ বয়স যদি দুই থেকে ১১ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সিরাপ এই ঔষধটি খেতে হবে ৫ মি:লি: অর্থাৎ এক চা চামচ দৈনিক দুইবার।
✓ বয়স ৬ থেকে ১১ বছর হলে সেক্ষেত্রে ট্যাবলেট ওষুধ ৩০ মিলিগ্রাম দৈনিক দুইবার অথবা ৬০ মিলিগ্রাম দৈনিক একবার খেতে হবে।
✓ বয়স প্রাপ্তবয়স্ক হলে অথবা ১২ বছরের বেশি হলে সে ক্ষেত্রে ৬০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট দৈনিক দুইবার অথবা ১২০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট ওষুধটি দৈনিক একবার সেবন করতে হবে।

মূলত বয়স এবং সমস্যার বিষয় বিবেচনা করে চিকিৎসকরা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে ঔষধ সেবনের নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন। তাই অবশ্যই অবশ্যই যে কোন ঔষধ সেবনের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধি সেবন যোগ্য নয়।

মনে রাখবেন, প্রত্যেকটি ওষুধের এমন কিছু সাইড ইফেক্ট অবশ্যই থাকে যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই রিস্ক না নিয়ে প্রথমত নিজের সমস্যাগুলো চিকিৎসকের নিকট উপস্থাপন করুন অতঃপর তাদের পরামর্শ ও নির্দেশনা মেনে সঠিক মাত্রায় সঠিক নিয়মে সেবন করুন সঠিক ঔষধ।

ফেক্সো ১২০ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

ফেক্সো ১২০ দীর্ঘদিন যাবত সেবনের ফলে সাধারণ কিছু সাইড ইফেক্ট অর্থাৎ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সেগুলো হলো–

  • বমি অথবা বমি বমি ভাব
  • মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ক্লান্তি ভাব
  • ঘুম ঘুম ভাব কিংবা অস্বাভাবিক ঘুম
  • হাঁচি কাশি
  • গলা ব্যথা
  • পেট ব্যথা
  • বেশি ব্যথা
  • পিঠে ব্যথা
  • পেট খারাপ সহ মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং পরিপাকতন্ত্রের নানা সমস্যার আবির্ভাব।
এখন আসো আরো জেনে নেই– গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদান কালে কেউ ফেক্সো ১২০ ট্যাবলেট ওষুধটি খেতে পারবে কিনা!

ফেক্সো ১২০ গর্ভাবস্থায়

ফেক্সো ১২০ ট্যাবলেট ঔষধ গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদান কালে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাই উচিত। কেননা প্রেগনেন্সি ক্যাটাগরি অনুযায়ী ফ্লেক্স ১২০ ফেক্সোফেনাডিন হাইড্রোক্লোরাইড C শ্রেণীভূক্ত ঔষধ।

ফেক্সো ১২০ এর দাম

ইতিমধ্যে আমরা ফেক্সো ১২০ এর কাজ, খাওয়ার নিয়ম, কার্যকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনেছি বিস্তারিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ফেক্স ১২০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট ওষুধের দাম কত?

মূলত এই ওষুধের প্রতি পিসের দাম ৯ টাকা। অতএব আপনি যদি একটি ট্যাবলেট ওষুধ কিনতে চান তাহলে নয় টাকা পে করতে হবে। অন্যদিকে ৫০ টি ট্যাবলেটের এক বক্স ঔষুধের দাম ৪৫০ টাকা এবং স্ট্রিপ প্রাইস মাত্র ৯০ টাকা।

তো পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আজকের আলোচনার মাধ্যমে ফেক্সো ১২০ এর কাজ এবং এর সম্পর্কিত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। তবুও আপনি যদি বহু জিজ্ঞাসিত আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চান তাহলে নিচের প্রশ্নোত্তরগুলো পড়ুন।

ফেক্সো ১২০ নিয়ে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর

১. ফেক্সো ট্যাবলেট এর কাজ কি?
✓ ফেক্স ট্যাবলেট এর কাজ হলো – শরীরে এলার্জি সংক্রান্ত লক্ষণ গুলোর বিরুদ্ধে প্রটেকশন যোগানো এবং ফিস্টামাইন নামক রাসায়নিক পদার্থকে ব্লক করা।

২. ফেক্সো ১২০ ট্যাবলেট এর প্রতি লক্ষণ গুলো কি কি?
✓ ফেক্স ১২০ এর প্রতি লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অ্যালার্জি।

৩. ফেক্সো ১২০ মি: গ্রা: ট্যাবলেট এর ক্ষতিকর প্রভাব গুলো কি কি?
✓ফেক্সো ১২০ এর ক্ষতিকর প্রভাব গুলো হলো– বমি অথবা বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত মাথা ঘোরা, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা, ডায়রিয়া, পেট খারাপ সহ পরিপাকতন্ত্রের নাড়াবিদ সমস্যার সৃষ্টি, বেদনাদায়ক মাসিক, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা এবং মুখ ঠোঁট চোখের পাতা জিহ্বা সহ হাত-পা ফোলা ফোলা অনুভব।

৪. ফেক্সো ১২০ ঔষধ এর কর্মক্ষমতার সূত্রপাত বা প্রভাব কখন থেকে শুরু হয়?
✓ এটি সেবনের এক থেকে দুই ঘন্টার মধ্যে কার্যক্ষমতার সূত্রপাত অর্থাৎ প্রভাব শুরু হয়।

৫. ফেক্স ১২০ ট্যাবলেট ওষুধের কি কোন বিকল্প আছে?
হ্যাঁ ফেক্সো ১২০ ঔষধেরো বিকল্প ঔষুধ রয়েছে। যেমন– হিস্টলক ১২০ এমজি, এফ এক্স-২৪ ১২০ এমজি, ফেক্সোরেস্ট ১২০ এমজি, ফেক্সোট্রিগ ১২০ এমজি সহ প্রভৃতি।

৬. ফেক্সো ১২০ ঔষধটি কোথায় অনুমোদন করা হয়?
✓ এই ওষুধটি ইন্ডিয়া, জাপান এবং ইউনাইটেড স্টেট এ অনুমোদন করা হয়।

৭. ফেক্সো ১২০ ট্যাবলেট ওষুধের পারস্পরিক ক্রিয়া গুলো কি কি?
✓মূলত ফেক্সো ১২০ ট্যাবলেট ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি আপনি যদি এর সঙ্গে একাধিক অন্য কোন ঔষধ সেবন করেন অথবা অন্য কোন খাবার বা নির্দিষ্ট কোন পানীয় গ্রহণ করেন তাহলে পারস্পরিক ক্রিয়ার ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে। তবে এটা ঝুঁকিপূর্ণ কোন বিষয় নয়, যদি আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করেন।

তো অডিয়েন্স বন্ধুরা, এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা-পর্ব। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং মেডিসিন সম্পর্কিত আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন