এক মিনিটে ঘুম আসার উপায় ও প্রাকৃতিক উপায়ে ঘুম আসার উপায়

আজকে আমাদের ওয়েবসাইটে এই অংশে আপনারা জানতে পারবেন এক মিনিটে ঘুম আসার উপায় ও প্রাকৃতিক উপায়ে ঘুম আসার উপায় সম্পর্কে।
এক মিনিটে ঘুম আসার উপায় ও প্রাকৃতিক উপায়ে ঘুম আসার উপায়
আপনারা যারা যারা ঘুম নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন ঘুম আসেনা। তারা যদি আজকের আর্টিকেলটি পড়েন তাহলে তাদের এক মিনিটের ঘুম আসার অভ্যাস হয়ে যাবে। এবং প্রাকৃতিক উপায় কিভাবে ঘুম আসে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ হয়ে যাবে।

এক মিনিটে ঘুম আসার উপায়

কেমন হতো যদি বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম চলে আসতো? কর্মব্যস্ত দিনের শেষে অথবা কাজের ফাঁকে পাওয়া স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়া যেত? সত্যি বলতে শুধুমাত্র ঘুমের সমস্যা মোকাবেলার মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বেশিরভাগ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব!

মিলিটারি বাহিনীতে একটি টেকনিক ফলো করা হয়, যার মাধ্যমে এক মিনিটেই ঘুমিয়ে পড়া সম্ভব। এটি মিলিটারি টেকনিক নামে পরিচিত। টেকনিকটি ধাপে ধাপে বর্ননা করা হলঃ

  • ১)প্রথমে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর আপনার প্রধান কাজ হল শরীরের সব অঙ্গ বিশেষ করে চোখ এবং চোখের চারপাশ, সমস্ত মুখমন্ডল, গলা-ঘাড়, হাত এবং পায়ের পেশিকে ধীরে ধীরে শিথিল করা। অর্থাৎ, সমস্ত শরীরকে রিল্যাক্স করতে হবে। যে শুনতে অদ্ভুত শোনালেও পারফেক্ট ঘুমের প্রধান শর্ত হলো শরীরকে রিল্যাক্স করা।
  • ২) এরপর বুকের পেশীকে শিথিল করুন এবং বুক ভরে গভীর নিঃশ্বাস নিন। এটি আপনার সমস্ত শরীরকে ঘুমের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে।
  • ৩)এবার নিজের মন থেকে সবধরনের চিন্তাভাবনা দূর করে নিন। অর্থাৎ মনকে সম্পূর্ণ চিন্তা মুক্ত করুন। যদি এই ধাপটি সম্পন্ন করতে সমস্যা হয়, তবে প্রথমেই মন থেকে সব নেগেটিভ চিন্তাভাবনা দূর করে দিন। আপনার জীবনের কোনো আনন্দ-পূর্ন ঘটনা মনে করুন, এরপর ধীরে ধীরে মনকে চিন্তা মুক্ত করে নিন।

প্রাকৃতিক উপায়ে ঘুমানোর উপায় ও প্রাকৃতিক উপায়ে ঘুম আসার উপায়

  • ১)ঘুমের প্যাটার্নঃআমাদের ঘুম সাধারণত একটি প্যাটার্ন অনুসরণ করে।একেক দিন একেক সময় ঘুমানোর ফলে এই প্যাটার্নে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করলে সহজেই ঘুমানো সম্ভব হয়। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
  • ২)ক্যাফেইনঃক্যাফেইনযুক্ত খাদ্য ঘুমের সমস্যা তৈরি করে।ক্যাফেইনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দিন বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে কোন ক্যাফিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
  • ৩)ইলেকট্রনিক ডিভাইসঃনিঃসন্দেহে মোবাইল, কম্পিউটার ;বিশেষ করে মোবাইল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা। মোবাইল, কম্পিউটারের স্ক্রিনের আলো আমাদের ঘুম আসতে বাঁধা প্রদান করে। তাই ভালো ঘুমের জন্য, ঘুমানোর অন্তত দুই ঘন্টা পূর্ব থেকে মোবাইল, কম্পিউটার, টেলিভিশন দেখা থেকে বিরত থাকুন।
  • ৪)ক্লান্তিঃশরীরে ক্লান্তি বোধ হলে সাথে সাথে না ঘুমিয়ে দেরি করলে পরবর্তীতে ঘুমাতে সমস্যা হয়। তাই অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ হওয়ার সাথে সাথে দেরি না করে ঘুমিয়ে পড়ুন।
  • ৫)কায়িক শ্রমঃদিনের বেলা যে যত পরিশ্রম করবে, রাতে সে তত ভালো ঘুমাতে পারবে। সারাদিন শুয়ে বসে থাকা ঘুম কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ। তাই ভালো ঘুমের জন্য, সারাদিন কিছু সময়ের জন্য হলেও ব্যায়াম বা অন্যান্য কায়িক শ্রমে সময় দিন।
  • ৬)ঘুমানোর পরিবেশঃকোলাহলমুক্ত, নিরব পরিবেশ ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও অন্ধকার ঘরে ভালো ঘুম হয়। তাই ঘুমানোর পূর্বে ঘুমের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে নিন।
  • ৭)তাপমাত্রাঃপ্রচন্ড ঠান্ডা বা প্রচন্ড গরমে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই রুমের তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রাখুন। বেশি গরম লাগলে প্রয়োজনে গোসল করে নিন। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমানোর পূর্বে গোসল করে নিলে ভালো ঘুম হয়।
  • ৮)খাবারঃঘুমানোর কমপক্ষে দুই ঘন্টা পূর্বে খাওয়া-দাওয়া সম্পন্ন করে নিতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন। খাবার খাওয়ার পর পরই ঘুমাতে যাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয় এবং এটি খুব ভালো ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটায়। এছাড়াও কিছু খাবার রয়েছে যা ঘুম বাড়াতে সাহায্য করে, যেমনঃ কাঠবাদাম, কলা, গরম দুধ, ডিম, মধু, মুরগির মাংস ইত্যাদি।
  • ৯)বই পড়াঃগবেষণায় দেখা গেছে, বই পড়লে সহজে ঘুম আসে। তাই ঘুম না আসলে বই পড়ে দেখতে পারেন।
  • ১০)দিনের বেলায় ঘুমঃদিনের বেলা ঘুমালে, রাতে সহজে ঘুম আসে না। তাই রাতে ভালো ঘুমাতে চাইলে, দিনের বেলায় ঘুমানো পরিহার করা উচিত।
  • ১১)সাপ্লিমেন্টঃমেলাটোনিন, ট্রিপটোফ্যান ইত্যাদি উপাদানযুক্ত কিছু সাপ্লিমেন্ট রয়েছে যা ঘুমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য করে। তবে এসব সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • ১২)স্পেশাল টিপসঃক্যামোমাইল ফুলের চা ঘুমের উদ্রেক ঘটাতে সাহায্য করে। এর প্রধান কারণ এতে থাকা একটি বিশেষ উপাদান যা অ্যাপাইজেনিন নামে পরিচিত। এটি ঘুম বাড়াতে সাহায্য করে। ডাক্তাররাও ঘুমের সমস্যায় ভোগা রোগীদের এই চা খেতে পরামর্শ দেন। তাই ঘুমানোর পূর্বে এক কাপ ক্যামোমাইল ফুলের চা খেয়ে নিলে আশা করা যায় ভালো ঘুম হবে। এছাড়াও ল্যাভেন্ডার ফুল ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে। এটি একটি সুঘ্রাণযুক্ত ফুল। আপনি চাইলে এই ফুল এর চা খেতে পারেন অথবা দুই তিন ফোঁটা লেভেন্ডার তেল পানির সাথে মিশিয়ে ঘুমানোর পূর্বে বালিশে স্প্রে করে নিতে পারেন। এটি আপনার ভালো ঘুমের সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে।

ঘুম কমানোর উপায়

আমরা সবাই জানি অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। ঠিক তেমনি অতিরিক্ত ঘুম আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ঘুম খুবই সমস্যার বিষয়। ঘুম কমাতে নিম্নোক্ত উপায়গুলো মেনে চলা যেতে পারে-

১)শর্করাগ্রহণ কমানোঃ
অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাদ্য আমাদের কর্মশক্তি কমিয়ে দেয় এবং ঘুম বেশি আসে। তাই, শর্করা কম গ্রহনের মাধ্যমে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ক্যাফেইনযুক্ত খাদ্য ঘুম আসতে বাধা প্রদান করে। তাই কম ঘুমাতে চাইলে, ক্যাফেইনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন।

২)কায়িক শ্রম কমানোঃ
শরীর যত ক্লান্ত হবে, তত বেশি ঘুম আসবে এটাই স্বাভাবিক। তাই,কায়িক শ্রম কমানোর মাধ্যমে ঘুম কমানো সম্ভব।

৩)হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাঃ
বেশি ঘুম আসলে কিছুক্ষণ হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে অতিরিক্ত ঘুম দূর হয়।

৪) আলো যুক্ত স্থানে অবস্থানঃ
কম আলোযুক্ত স্থানে ঘুম বেশি আসে। তাই ঘুম দূর করতে চাইলে বেশি আলোযুক্ত স্থানে পড়ালেখা বা যেকোনো কাজ করতে পারেন।

৫)চোখে পানি দেওয়াঃ
বেশি ঘুম আসলে চোখে পানি দিতে পারেন। এতে কিছুক্ষণের জন্য হলেও সহজে ঘুম আসবে না। উপরোক্ত পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে আশা রাখা যায় সহজে ঘুম আসবে না।

গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়?

গর্ভাবস্থায় কীভাবে ঘুমালে ভালো হবে এই নিয়ে গর্ভবতী মায়েদের অনেক চিন্তিত দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায় চিৎ হয়ে শোয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। চিৎ হয়ে শুলে গর্ভবতী মায়ের মেরুদন্ড এবং কোমরের হাড়ে অনেক চাপ পড়ে যা খুবই ক্ষতি কর। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরে রিল্যাক্সিং নামক হরমোন নিঃসরিত হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানের হাড়ের সংযোগস্থলে টেনডন নামক একটি পদার্থ থাকে যা হারকে একে অপরের সাথে আটকে থাকতে সাহায্য করে। রিল্যাক্সিন নামক হরমোন শরীরের ভিন্ন হাড়ের সংযোগস্থলের এই টেনডনকে আলগা করে দেয়। এর ফলে গর্ভাবস্থায় নারীর হার যথেষ্ট ভঙ্গুর বা দূর্বল অবস্থায় থাকে। এর ফলে বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চিৎ হয়ে শোয়া একদমই অনুচিত। পাশ ফিরে শোয়া উচিত।

বাম পাশ ফিরে শোয়াটা আপনার বাচ্চার জন্য ভালো। কারণ এতে করে পুষ্টি ও রক্ত প্লাসেন্টা দিয়ে সহজে বাচ্চার কাছে পৌঁছাতে পারে। এছাড়াও মায়ের কিডনির বর্জ্য ও অতিরিক্ত ফ্লুইড শরীর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য কাজ করতে পারে। এর ফলে হাত পা ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।

বাম পাশ ফিরে শুতে সমস্যা হলেও চিন্তার কিছু নেই। গর্ভাবস্থার ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত ডান দিকে ফিরেও শুতে পারেন, এতে বাচ্চার কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তবে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে ডান পাশে ফিরে শুলে অনেক সময় হৃদপিন্ডের রক্ত সঞ্চালনকৃত অংশ ভেনা ক্যাভাতে চাপ পরতে পারে। কিন্তু যারা বাম কাত হয়ে বেশিক্ষণ শুতে পারেন না, তারা ডান পাশে ফিরে শুয়ে পেটের নিচে বালি দিতে পারেন যাতে জরায়ুর চাপ সরাসরি নিচের দিকে পড়তে সক্ষম না হয়।

ঘুম না হলে কি হয়?

ঠিকমতো ঘুম না হলে বিভিন্ন প্রকার শারীরিক সমস্যায় পরার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন মানসিক রোগ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। যেমনঃ

  • ১)পোস্টট্রমাটিক ডিসঅর্ডার (PTSD)
  • ২)বাইপোলার ডিসঅর্ডার
  • ৩)ডিপ্রেশন
  • ৪)সিজোফ্রেনিয়া
  • ৫)এটেনশন ডেফিসিট/হাইপার একটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD)

ঘুমের জন্য কোন ব্যায়াম ভালো?

হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম ঘুমের সমস্যা দূর করে ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য করে। যে ব্যায়ামে হৃৎস্পন্দন দ্রুত বেড়ে যায়, তাকে অ্যারোবিক ব্যায়াম বলে। যেমনঃজগিং, জোরে হাঁটা, জগিং জাম্প, লাফ দেয়া ইত্যাদি।

কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয়?
১)ভিটামিন ডিঃমাছ, ডিম, দুধে ভিটামিন ডি বেশি পাওয়া যায়। 
২)ভিটামিন বি৬ঃমুরগীর মাংস, দুধ, মাছ ইত্যাদিতে ভিটামিন বি-৬ পাওয়া যায়।

শেষ কথা 
আপনি যদি এই ধরনের আরও তথ্য দেখতে চান তাহলে আমাদের এই ওয়েবসাইট রেগুলার ভিজিট করতে পারেন।আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে তথ্যবহুল পোস্ট পাবলিক করে পাঠকদের উপকার করি। আপনি যদি এমনই বিভিন্ন ক্যাটাগরির ইনফরমেটিভ তথ্য পেতে চান তাহলে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি 24 ঘন্টা ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন